রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

নৌপথে ইতালি যাওয়ার পথে ঠান্ডায় প্রাণ হারানো বাপ্পী শরীয়তপুরের

নৌপথে ইতালি যাওয়ার পথে ঠান্ডায় প্রাণ হারানো বাপ্পী শরীয়তপুরের

স্বদেশ ডেস্ক:

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রাণ হারিয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কামরুল হাসান বাপ্পী নামের এক যুবক। নৌপথে ইতালি যাওয়ার পথে যে সাত বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তাদের পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুর জেলায় উল্লেখ করা হলেও একজনের বাড়ি শরীয়তপুরে।

নিহত কামরুল হাসান বাপ্পী নড়িয়া উপজেলা মোক্তারেরচর ইউনিয়নের মূলপাড়া চেরাগ আলী বেপারী কান্দি গ্রামের আবুল বাসার কাজীর ছেলে।

বাপ্পীর বাবা আবুল বাসার কাজী জানান, গত নভেম্বর মাসে কামরুল হাসান বাপ্পী ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে প্রথমে দুবাই যান। পরে সেখান থেকে লিবিয়া যান। লিবিয়া থেকে ২৩ জানুয়ারি ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ট্রলারে উঠেন। পথিমধ্যে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সাত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পর ইতালির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রলারটি উদ্ধার করে।

পরে ২৫ জানুয়ারি ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মৃত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে। যার মধ্যে মাদারীপুরের পাঁচজনের তালিকায় বাপ্পীর নাম প্রকাশ হয়। তার সঙ্গে কোন কাগজপত্র না থাকায় এবং আশেপাশের লোকজন না চেনায় তার ঠিকানা মাদারীপুর দেখানো হয়েছে। পরে ইতালিতে বসবাসরত আত্মীয়স্বজন একটি লাশ বাপ্পীর বলে জানায়।

নিহতের মা লাভলী বাসার বলেন, গত বছরের ৮ নভেম্বর স্থানীয় দালাল নাসির উদ্দিন ব্যাপারীর প্রলোভনে পড়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ছাড়ে বাপ্পী। দুবাই হয়ে লিবিয়ার যান সেখানে একটি বন্দিশালায় দিন কাটান। পরে লিবিয়ায় থাকা সিলেটের পারভেজ নামের এক দালালের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে গত ২৩ জানুয়ারি রাতে অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয় ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে।

‌‘কিন্তু তারপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি বাপ্পীর সঙ্গে। ওরা আমার একমাত্র ছেলেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ইতালি পৌঁছাবে এমন কথা বলে পাঠায়। এখন আমার সব শেষ। আমার ছেলেও নাই, কিছুই নাই। এখন শুধু বাপ্পীর লাশটি দেখতে চাই। সরকারের কাছে একটাই দাবি’, যোগ করেন লাভলী বাসার।

নিহতের চাচাতো ভাই আনিস কাজী বলেন, ‘ইতালিতে আমার কয়েকজন আত্মীয়স্বজন রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানি যে বাপ্পীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে সে বাপ্পী আমার ভাই। সরকার যদি আমাদের বাপ্পীকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয় তাহলে ভাইকে দাফন করাতে পারব। আমরা চাই ভুলটি সংশোধন করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘কামরুল হাসান বাপ্পী নামের যে ছেলেটি ইতালিতে মারা গেছে তার বাড়ি মাদারীপুর দেখানো হয়েছে। তবে নড়িয়ার একটি পরিবারের আবেদন আমরা পেয়েছি। মরদেহটি আসার পর শনাক্ত করা হবে। পরে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইতালি দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি ২৮৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। অভিবাসনপ্রত্যাশী অন্যরা মিসরীয় নাগরিক। ঠান্ডায় হাইপোথামিয়া হয়ে মারা যান সাত বাংলাদেশি।

মৃতরা হলেন- মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার মো. ইমরান হাওলাদার কালু, বরাইল বাড়ি এলাকার জয় তালুকদার, মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড়া এলাকার জহিরুল ইসলাম শুভ, রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উমারখালী এলাকার সাফায়েত মোল্লা ও বাপ্পী, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাজ্জাদ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাইফুল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877